আজ ৩০ শে মার্চ, চিকিৎসক দিবস। আমার সকল চিকিৎসক সহকর্মীকে এই বিশেষ দিনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, আমরা বেশিরভাগ চিকিৎসকেরাই জানিনা আজ চিকিৎসক দিবস। কারন রাষ্ট্রীয় ভাবে কখনো এটি পালন করা হয়নি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখনো এই বিশেষ দিবসে কোন বানী দেননি। কোন সংবাদপত্রও এদিন চিকিৎসকদের জন্য আলাদা কোন কলাম বরাদ্দ রাখেনি। শুধুমাত্র ঔষধ কোম্পানির কিছু প্রতিনিধি বছর বছর তাদের ব্যাবসায়িক স্বার্থেই আমাদেরকে এসে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়—আজ আমাদের দিন।
রাষ্ট্রের সবচেয়ে মেধাবীদের অন্যতম হলো চিকিৎসক । অন্তত দু:খজনক হলেও সত্যি, গত কয়েক দশকেও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই মহান পেশার প্রতি কোন সুনজর দেয়া হয়নি।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে অপরাজনৈতিক বা প্রভাবশালী পেশীশক্তির কাছে শারিরীক এবং মানসিক ভাবে নিগৃহীত হয়েও চিকিৎসকগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে কখনো কোন নিরংকুশ সহযোগিতা পায়নি।
যেকোন দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান কতোটা উন্নত তা নির্ভর করে, সে দেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা কতোটা শক্তিশালী অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে সেটার উপর। সরকারী-বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগ নির্নয়ের সব সুযোগ সুবিধা এবং পর্যাপ্ত জনবল ও অবকাঠামো, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এর সুব্যবস্থা নিশ্চিত করে রোগীর পুর্ণাঙ্গ চিকিৎসার মাধ্যমে নাগরিকদের আস্থা, বিশ্বাস ও সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্যেই নিহিত থাকে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা। অথচ দেশের অবকাঠামো, জনবল, প্রযুক্তি, উপকরণের অভাবের দায় পরোক্ষভাবে চিকিৎসকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া কোন যুক্তিতেই গ্রহনযোগ্য নয়। সেই দায় এড়াতে ক্ষুদ্ধ জনগণ কর্তৃক চিকিৎসকদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা, সুকৌশলে চিকিৎসক ও নাগরিকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা থেকে অবশ্যই রাষ্ট্রকে বিরত থাকতে হবে।
রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই স্বীকার করবেন, চিকিৎসকগণ বেশিরভাগ সময়েই মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। অথচ রাষ্ট্র দীর্ঘদিন এ বিষয়ে উদাসীন ও নিষ্ক্রিয়।নির্দিষ্ট পেশা বা গোষ্ঠীকে অবহেলিত বা বঞ্ছিত রাখা- একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের এরকম দ্বৈত নীতি থাকা কোনভাবেই সমীচিন নয়। রোগী ও চিকিৎসক পরস্পর আস্থা, ভালবাসা ও বিশ্বাসে অবস্থান না করলে চিকিৎসক যেমন নিরাপদ ও মর্যাদায় থাকবে না, সেরকমই রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবার গুনগত মান ও নিশ্চিত করা যাবে না।
এতসব বৈষম্যের পরও যেসব নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন সবাইকে আবারো চিকিৎসক দিবসে প্রাণঢালা অভিবাদন আর অপরিসীম শুভেচ্ছা।
ডা: মো: সিরাজুল ইসলাম
এমবিবিএস,এফসিপিএস, এফএসিএস,এফএমএএস
সাধারণ সম্পাদক
শিক্ষক সমিতি,
পাবনা মেডিকেল কলেজ, পাবনা।
Leave a Reply